LYRIC

বিকেল ৪ টা স্কুল ছুটি হয়েছে
মাত্র হই হুল্লোড় করে
ছাত্রছাত্রীরা যে যার মতো
বাড়ি যাচ্ছে।তাড়াহুড়ো করে
বন্ধুদের নিয়ে বের হয়ে গেটের
সামনে দাড়িয়ে আছি সেটা বিনা
কারনে নয়, কেউ একজন এখন স্কুল
থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে
রাস্তায় হাটবেন আর আমার
কাজটা হবে উনার পিছে পিছে দশ
মিনিট হেটে উনার বাড়ির
রাস্তা পর্যন্ত যাওয়া আর
বোরকার নিচে থাকা দুইটা
চোখকে অপলকে দেখা। প্রথম কাজ
হচ্ছে উনাকে খুজে বের করা,
১৫৯৩ ছাত্রছাত্রীর মাঝে
১৫৯২জনকে বাদ, বাকি একজনকে
খুজছে ছয়টি চোখ। ছয়টা চোখই
আমার না দুই বন্ধুর চারটা আর
বাকি দুই টা আমার। যদিও
বোরকার নিচের ঐ অপ্সরীকে
আমার দুই চোখই সবচেয়ে বেশী
চিনে।
,
♦একে একে সবাই চলে যাচ্ছে
কিন্তু সে বের হচ্ছে না কেন?এই
বিষয় টা নিয়ে আমি বেস কয়েক বার
ভোগান্তিতেও পড়েছিলাম, প্রথম
প্রথম যখন তাকে ফলো করতাম বেস
কয়েকবার তাকে মনে করে অন্য
বোরকাওয়ালির পেছনে পেছনে
গেছি কিন্ত সময়ের ব্যাবধানে
বুঝতে পেরেছি যার পেছনে এতো
সময় ধরে হাটছি ওটা সেটা নয়।
তখন আমার হতাশা মিশ্রিত
মুখটা দেখে বন্ধুরা আমাকে
যেরকম পচানি দিত সেটা সবাই
সহ্য করতে পারবে না আমি ও
পারতাম না তাই তো বাকিটা পথ
রেসলিং খেলে বাড়িতে যেতে হত।
এখনো মাঝে মাঝে আমাকে একই রকম
ভোগান্তি নিতে হয়।
,
♦এতোসব বোরকাওয়ালির মাঝে
উনাকে চিনার একটা কৌশল বের
করেছি।বোরকার সাথে তিনি একটা
নতুন লেডিস ছাতাও ব্যাবহার
করা শুরু করেছেন যার উপরের
অংশের রং লাল আর নিচের অংশ
সাদা রঙ দিয়ে রাউন্ড
করা।আগের ছাতাটা কালো রঙের
ছিল যার কারনে উনাকে সব
বোরকাওয়লি থেকে আলাধা করতে
সমস্যা হত।
,
♦লাল ছাতা নিয়ে একজন
বোরকাওয়ালি ভিতর থেকে এখন
বাইরে আসছে। হরিনীর মত তার
দুটি চোখ এক দৃষ্টিতে আমার
চোখে তাকিয়ে আছে এই চাহনি
আমার খুব পরিচিত,মায়া ভরা এই
চাহনিতে যে কেউ পাগল হতে
পারে। তাই তো আমি পাগল
হয়েছি,হারিয়ে ফেলেছি নিজেকে
সেই চাহনির মাঝে।ওই চোখ গুলো
যেন আমায় বুঝাতে চাচ্ছে 'মায়া
এ এক কঠিন মায়া'।
,
ও হে এতক্ষন থেকে তো উনার নামই
বলা হয় নি উনি ♥♥♥ঝুমি আমার
ঝুমি♥♥♥।
,
,
♦রাস্তার এক পাশ দিয়ে সে
হাটছে অন্য পাশে আমি আমাদের
সামনে পিছনে ছাত্র ছাত্রী
অনেক,সবকিছুকে ডিএসএলার
ক্যামেরার মতো ঘোলাটে বানিয়ে
দিয়ে আমার চোখের ফোকাসটা
পড়ছে ঐ অপ্সরীর উপর যার দুটি
চোখ আর হাত ছাড়া বাকি সব
বোরকার নিচে (স্কুলে ঢুকার পর
ঝুমি তার মুখ খুলে দেয়)। একি
দশ মিনিটের রাস্তা যেন এক
মিনিটেই শেষ।
মানুষ নির্দিষ্ট কোন কাজে
থাকলে সময় খুবই তাড়াতাড়ি
ফুরিয়ে যায়।ঐ চোখ দুটো
দেখাটা হয়ত আমার সেই
নির্দিষ্ট কাজ যার কারনে
বাকি নয় মিনিট আমাকে স্পর্শ
করতে পারে নি।
♦এখন সে আজকের জন্য চলে যাবে
অন্য এক রাস্তায় সেটা তার
বাড়ির রাস্তা যেই রাস্তায়
একান্ত সে যাবে আমি না। এখানে
একটা মজার ব্যাপার আছে
স্কুলে যাওয়া আসার সময়
ছাত্রছাত্রীরা রাস্তার
আলাদা পাশ দিয়ে যাওয়া আসা
করত। ঝুমিকে তার বাড়ির
রাস্তায় যেতে হলে মেইন রোড
ক্রস করে অন্য পাশে আসতে হবে
অর্থাৎ যেই পাসে আমি
হাটছি।এখানে প্রতিদিন আমি
ধীরে ধীরে হাটি যেন ঝুমি আমার
সামনে দিয়ে রাস্তা ক্রস করে
যায় আর আমি তাকে আরো কাছ থেকে
দেখার সুযোগটা পাই।ওর লাজুক
চোখ গুলো চুরি করে আমাকে
দেখার বৃথা চেষ্টা করত সেটা
আমি বুঝতে পারতাম। মেয়েটা
হয়ত জানে বা জানে না তার চুরির
চাহনিটা আমাকে ক্ষনে ক্ষনে
তার জন্য দিওয়ানা করে
তুলেছে। সে আজকের জন্য চলে
যাচ্ছে আর আমার মন ছটফট করছে,
একটু যন্ত্রনা হচ্ছে সে
যন্ত্রনা বিরহের যন্ত্রনা।
♦ ইস্তিয়াক আর আব্দুল্লাহকে
এই দশ মিনিট মনে ছিল না গাধা
দুইটায় গেল কই।আশে পাশে তো
কোথাও নাই। তার মানে বলদ
দুইটায় এখনো আমার
বোরকাওয়ালিরে স্কুল গেটের
সামনে খুজতাছে।
,
,
,
♣[যদিও এই দুই জনকে গাধা বলদ
বলে সম্বোধন করতেছি কিন্তু
প্রেম বিষয়ের উপরে এদের
জ্ঞান যথার্থ এই বিষয়ে গাধা
বলদ বলে আমাকে সম্বোধন করলে
চলে।
ঝুমিকে দেখার প্রথম দিন থেকে
আজ অবধি ওর পিছে লেগে আছি শুধু
এদের কারনে। প্রথম প্রথম
ঝুমি যখন আমাকে ইগনোর করত তখন
আমি আশা ছেড়ে দিতাম ভাবতাম
নাহ এই মেয়ে কখনই আমাকে বুঝবে
না। আর ঠিক তখনি ওরা বলত হাল
ছাড়লে চলবে না।
আমি ঝুমির এক ক্লাস সিনিওর।
আমাদের স্কুলে ছেলে মেয়েদের
আলাদা ভাবে ক্লাস নেওয়া হয়
বিধায় মেয়েদের সাথে
কমিউনিকেশন করা অনেক কঠিন
কাজ।
খুব কঠিন কাজ গুলো সহজ হয়ে যায়
কখন? যানেন,যখন আপনার পাশে
ইস্তি আর আব্দুল্লাহর মতো
দুইটা গাধা থাকবে।এই রকম বলদ
গুলো সত্যি অনেক নিরীহ।
নিজের ঘাড়ে লাঙল রেখে আপনার
জমিনে হাল চাষ করে দেওয়ার
দায়িত্ব এদের আর আপনি শুধু
ফসলটা ঘরে তুলবেন।।
♦হয়েছে কি?প্রথম প্রথম আমি
ঝুমিকে ভয় পেতাম ওর চোখে চোখ
পড়লে কেমন জানি লজ্জা লাগত,
ঝুমি যখন পানি নেওয়ার জন্য
দুতালা থেকে নিচে টিউবওয়েল এ
আসত তখন আমাকে জোরজবস্তি করে
টিউবওয়েলে নিয়ে যাওয়া হতো
পানি খাওয়ানোর জন্যে,ছেলে
মেয়েদের জন্য আলাধা টিউবওয়েল
আছে কিন্তু আমাদের ক্লাশরুম
থকে মেয়েদের টিউবওয়েল ধারে
থাকায় আমরা মেয়েদের টিউবওয়েল
এ পানি খেতাম। স্কুলের
সিনিওর ছাত্র হওয়ায় কেউ
কিচ্ছু বলত না। আমি টিউবওয়েল
এ যাবো আবার যাব না দুমুখো
থাকতাম কিন্তু ওই যে দুইটা
গাধা আছে না এরা আমাকে গরুর
মতো টেনে নিয়ে যেত,তখন আমি
নিরুপায় না পারছি পিছন দিকে
দোউড় দিতে আবার না পারছি
সামনের অপ্সরীর রুপ সহ্য
করতে। আমার এমন নাস্তানাবোধ
আবস্থা দেখে মেয়েটা প্রায়
সময় বিরক্তি বোধ করত।
সারাদিনের জন্য ওকে আর টিউব
ওয়েলের ধারে কাছেও এমনকি
ক্লাসরুমের বাইরেও দেখা যেত
না।
এরকম আরো অনেক সময় ইগনোরের
কারনে আমি ভাবতে লাগলাম ঝুমি
আমাকে পছন্দ করে না।আমার
উপস্থিতিতে সে বিরক্তি বোধ
করে তাই ওর সামনে না যাওয়ার
সিদ্ধান্ত নিলাম।
ভাবনানুযায়ী কাজ হলো এই ফাকে
ব্যাক্তিগত কিছু সমস্যার
কারনে স্কুলে যাওয়া হলো না
বেস কয়েক দিন।তখন ঝুমি কে
অনেক মিস করতে লাগলাম। যেদিন
স্কুলে গেলাম সকালে গেটের
সামনেই ঝুমির সাথে দেখা হল
দ্বিতীয় বারের মতো তার চোখে
চোখ পড়ে নি মাথা নিচু করে সোজা
ক্লাস রুমে চলে আসলাম।
ইস্তিয়াক বকা দেওয়া শুরু করল
এতো দিন কই ছিলাম ফোন বন্ধ ছিল
কেন ইত্যাদি। হারামি এটাও
বলতে ভুল করে নি 'এক জোড়া চোখ
আমাকে খুজে না পেয়ে হয়রান'।
আমি ইস্তিকে বলেছিলাম
-দেখছ না ঝুমি আমাকে ইগনোর
করে।
-আরে বোকা,মেয়েরা প্রেম করার
আগে ছেলেদের পরীক্ষা করে
এইটা ও বুঝস না?
-তাই
-হুম
-চল ঝুমিকে দেখে আসি?
– চল যাই
(আল্লাহর বান্দার মুখ দিয়ে
"এখন যাবো না" কথা টা কোন সময়
উচ্চারণ হয় নি) ] ,
,
,
হয়ত ভাবছেন এদের গাধা,বলদ বলে
সম্বোধন করি কেন? এই যে আমি
ঝুমির পিছনে পিছনে চলে এসেছি
সেটা ওরা খেয়াল ও করেনি,এখনো
এরা গেটের সামনে ঝুমিকে
খুজছে। ইস্তিকে ফোন দেই
-হ্যালো ইস্তি ঝুমিকে পাইছস।
-না এখনো বের হয় নাই।
-আচ্চা বের হলে আমাকে ফোন দিস
আমি স্কুলের পাশে
লাইব্রেরিতে আছি।
-আচ্ছা।
এই বলে বাড়ির দিকে হাটা
দিলাম। আসালে এদেরকে বাশ
দিলে পৈশাচিক একটা আনন্দ
মিলে…
,
,

♦ মার্চ মাসের শেষ সময়, স্কুলে
অনুষ্ঠান
চলছে।প্রাতিষ্ঠানিক
অনুষ্ঠান আমার ভালো লাগে না
তাই প্রায় সময় এ রকম
অনুষ্ঠানে যাই না। আজ যাচ্ছি
অনুষ্ঠানেই যাচ্ছি তবে
উদ্দেশ্য শুধু একজনই।
স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের
সংখ্যা অন্যান্য দিনের চেয়ে
অনেক বেশী।হ্যাড স্যারের
মুখে দায়িত্বের ছাপ । সবাইই
যে যার মতো ব্যাস্ত আমিও
ব্যাস্ত।আমার অনুসন্ধানী
চোখ জোড়া খুজছে তাকে যার
আড়চোখের চাহনি সে দেখতে
চায়।বন্ধুরা আমার সাথেই
আছে,কিন্তু ঝুমিকে তো আশপাশ
কোথাও দেখা যাচ্ছে না তার উপর
এতো ছাত্রী।একজায়গায়
দাঁড়িয়ে থাকতে আর ভালো লাগছে
না, অনুষ্ঠান শেষ
পর্যায়ে,মাইকের ঘ্যান
ঘ্যানানি মাথাটা আউলা ঝাউলা
করে দিচ্ছে।তীব্র গরমে পানির
পিপাষা পেয়েছে অনেক পানি পান
করার জন্য একা একা টিউবওলে
গেলাম হাতল চাপ দিয়ে পানি
খেতে যাব ঠিক তখন দেখি একটা
খালি বোতল,কেউ একজন সেই বোতলে
পানি ভরতে চাচ্ছে তার হাত
গুলো আমার যথেষ্ট চেনা মনে
হলো, তার মুখের দিকে তাকালাম ও
মাই গড হাজার ফুলের মাঝে যে
গোলাপকে এতো সময় আমি খুজে
হয়রান সে আমার সামনে। তাও
আবার টিউবওয়েল এ আমার চাপ
দেওয়া পানি সে বোতল ভর্তী
করছে আমি বিশ্বাস করতে পারছি
না। আমার হার্ট বিট বেড়ে
যাচ্ছে ওর মুখের দিকে
তাকালাম খুব মনযোগ দিয়ে পানি
ভরছে।আমার চাপ দেওয়া পানি
বোতল ভর্তি করা যেন তার
অধীকার।আমি মোটামোটি জোরে
টিউবওয়েল চাপ দিচ্ছি যেন
বেশি পানি বের হয়ে বোতলে কম
পানি যায় ফলশ্রুতিতে বোতল
ভরতে সময় বেশী লাগে আর এই ফাকে
আমি এহেম এহেম…। আরেকটা চাপ
দিলে বোতল ভরে যাবে তার মানে
এটা শেষ চাপ, শেষ চাপটা ইচ্ছা
করেই অনেক জোরে দিলাম। ঝুমির
বোরকার হাত ভিজে গেল মায়াভরা
রাগ নিয়ে একজোড়া চোখ আমার
দিকে তাকালো। আমার মনটা চুপি
চুপি বলছে,"মেয়ে ভালবাসা
মেশানো চোখে আমার সাথে রাগ কর
না,তুমি হয়ত জানো না সেই রাগ
তোমার রুপ বৃদ্ধি করে দেয়।
এটা ঝুমির সাথে ঘটা প্রথম কোন
সরাসরি ঘটনা।
এবার লক্ষ্য করলাম উনি কোথায়
গিয়ে বসেন। ফিরে আসলাম আগের
জায়গায় এতক্ষনে বন্ধুরা
ঝুমিকে খুজে বের করে ফেলেছে।
-মারুফ ওই দেখ ভাবী বসে আছে।
-কই?
– সামনের বিল্ডিং এ। ওই যে
একটা গাছ দেখা যাচ্ছে ওইটার
ঠিক পেছনে তাকা।
-কই না তো এখানে ঝুমি নাই।
-আরে বলদ ভালো করে দেখ।
-ধুর ওইখানে সে নাই।
এবার কিল ঘুসি আরাম্ভ করা
হলো।
এ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য আমি
তাদের সাথে সম্মত হলাম।
আমি দেখেও না দেখার ভান
করলাম। আসলে এদের কাছে
নিজেকে হাদারাম গাধা হিসাবে
উপস্থাপন করার মজাই আলাদা।
টিউবওলে ঘটে যাওয়া ঘটনা
তাদের বলতে শুরু করেছি এরা
নিরানব্বই দশমিক নয় নয়
পারসেন্ট মনযোগ সহকারে ঘটনা
শুনছে।
এই ফাকে আমি ঝুমিকে দেখছি,বার
বার দেখছি। সে ও আমাকে দেখছে এ
যেন চারটে চোখের সংঘর্ষ
বারবার। সে খুবই লজ্জা
পাচ্ছে। কে যানে! এতক্ষন আমি
তাকে দেখি নি, আর এই ফাকে চুরি
করা চাহনিতে সে হয়ত আমায়
দেখেছে অনেক বার। এবার সেই
চুরি করা চাহনির চোর আমার
চোখে ধরা পড়ছে বারবার।
এই রমনী যেই সেই চোর নয়
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চোর যে
কিনা আমার মন চুরি করেছে।
একজন সুস্থ মানুষের সবচেয়ে
মুল্যবান জিনিশ তার মন,সেই মন
চুরি করার ক্ষমতা একজনেরই
যার প্রতি সে দুর্বল, যাকে সে
ভালবাসে অনেক বেশি
ভালবাসে।চোর ধরা পড়লে
সাধারনত শাস্তি পায় কিন্ত
এরা পায় সীমাহীন ভালবাসা।
,
অনুষ্ঠান শেষ। আমাদের রুটিন
মাফিক কাজ শুরু, গেটের সামনে
যথারিথী দাঁড়িয়ে আছি।আজ
সাহসটা অনেক ভেড়ে গেছে।
প্রপোজ করার জন্য চাপ দিচ্ছে
বন্ধুরা। আমার ও মন বলছে
সুযোগটা কাজে লাগাতে হবে।
ঝুমি তার বান্ধবীদের সাথে
রাস্তায় হাটছে,রাস্তার আন্য
পাশে হাটছি আমরা তিন জন সামনে
পেছনে বরাবরের ন্যায়
ছাত্রছাত্রী অনেক। বন্ধুরা
ধাক্কাধাক্কি শুরু করল,যা
রাস্তার ওই পাশে গিয়ে বলে দে
সব কথা। কিন্তু আমার ভয় করছে
অবশ্য ঝুমিকে না,তার
বান্ধবীদের।তার বান্ধবীদের
সবসময় আমার কাছে মনে হয়
কাবাবমে হাড্ডি। তবুও বুকে
এক বালতি সাহস নিয়ে রাস্তার
ওপাশে যাওয়ার প্রস্তুতি
নিলাম।এমন সময় একটা সিএনজি
ঝুমির সামনে এসে থামল গাড়ির
ভেতর দুইজন মহিলা কে দেখা গেল
যার মধ্যে একজনের চেহারা
প্রায় ঝুমির চেহারার মতো।
বুঝলাম এরা তার পরিবারের
সদস্য। গাড়িতে উঠে চলে গেলেন
সেই অপ্সরী আর এই করুন দৃশ্য
উপভোগ করলাম আমরা তিন বন্ধু।
.
৩ এপ্রিল
♦ টিফিন টাইম। সচরাচর এই সময়
মেয়েদের টিউব ওয়েলে যথেষ্ট
জ্যাম থাকে। জ্যামে আটকে আছে
ঝুমি,মুখে বিরক্তির ছাপ
নেই,খুশি খুশি ভাব স্পষ্ট, চোখ
দুটো যেন কিছু বলতে চাচ্ছে।
দৃশ্যটা একটু দূর থেকে দেখছি
আমরা।
ঝুমির লজ্জা রাঙা চোখ এই
প্রথমবারে মত আমাকে ইশারা
করল তার কাছে যাওয়ার জন্য।
আমি কনফিউজড সে কি সত্যি
আমাকে ডাকছে,আব্দুল্লাহ পিছ
থেকে বলল চল তকে ডাকছে। আমরা
হটা দিলাম, ঝুমি তাদের
ক্লাসের দিকে চলে যাচ্ছে ।এ
কি আমাকে ডাক দিয়ে মহারানী
নিজেই উদাও হচ্ছেন কি জন্য
ঠিক বুঝতে পারছি না। একটা ভাজ
করা কাগজ তার হাত থেকে পড়ল
সাথে সাথে উনি পিছু ফিরে আমার
মুখের দিকে তাকালেন আর এর
সাথেই আমি উপহার পেলাম ভুবন
ভুলিয়ে দেওয়া একটা হাসি।আমি
সেই হাসিতে ডুবে আছি কোন কিছু
খেয়াল না করে তার পিছু পিছুই
হাটছি। উনার হাসি টা এবার
রাগে পরিনত হয়ে গেল বুঝতে
পারছি না কারনটা কি, আমি থমকে
গেলাম। উনি ইশারা করলেন
কাগজের দিকে।আমি এবার ঘটনা
বুঝছি। কাগজ তুলতে যাচ্ছি
কিন্তু কাগজ কই গেল। আমি
একরাশি টেনশনে টেনশিত। খেয়াল
করলাম কাগজ টা ইস্তির হাতে।
তার মানে ইস্তি আগে ভাগেই
বুঝে নিছে যে কাগজে কুচ
গাড়বাড় হে।ক্লাসে এসে কাগজ
খুললাম লিখা,
ঠিক ৫:৩০ মিনিটে কল দিবেন 0177612***


কাগজ নিয়ে ইতোমধ্যে বন্ধুদের
টনাটানি শুরু হয়ে
গেছে।খুশিতে আমি আত্মহারা…
,
সময় ৫ টা ৩০ মিনিট
মোবাইলের স্ক্রিনে কাংখিত
নাম্বার তুলা হয়েছে সবুজ
বাটন চাপ দেওয়া হল। আমার শরীর
কাপছে সাথে সাথেই ডান হাতের
বুড়ো আংগুল লাল বাটন চাপ দিল।
ঘটনা কি হলো বুঝতে পারছি না। ১
মিনিট পার হয়ে গেল,নাহ ফোন
আমাকে দিতেই হবে। চোখ বন্ধ
করে সবুজ বাটন চাপ দিলাম
দুইবার, রিং হচ্ছে, ওপাশ থেকে
মিষ্টি একটি কন্ঠ বলে উঠল
,
– হ্যালো,কে?
(এমনিতেই চাপ নিতে পারছি না
তার ওপর আবার এরকম প্রশ্ন,
স্টকে থাকা বুদ্ধি কাজে
লাগাতে হবে)
– জ্বী আমি ঢাকা থেকে সিয়াম
বলছি, মারুফ কি বাসায় আছে?
– না এখানে মারুফ নামের কেউ
নেই তবে ঝুমি নামে কেউ একজন
আছে।
– ওহে আমি ঝুমিকেই চাচ্ছিলাম।
– কেন ঝুমির সাথে কি দরকার?
– না মানে, মারুফ নামের কেউ
একজন ঝুমির সাথে কথা বলতে
চাচ্ছে।
– জ্বি বলুন আমি ঝুমি।
– কি বলব?
– কছু বলতে পারবেন না তো ফোন
দিলেন কি জন্য? রাখছি।
– না না না না বলছি বলছি।ভালো
আছেন?
– ভালো
– ভাত খেয়েছেন?
– আপনি এতো ভীতুর ডিম কেনো?
– আসলে প্রথমবার তো তাই।
– কি প্রথমবার?
-কিছু না
– স্কুল থেকে রাস্তা পর্যন্ত
এভাবে পেচার মতো আমার দিকে
চেয়ে থাকেন কেন।
– সেটা তো জানি না,
– তাহলে কি জানেন?
– শুধু জানি, আমি তোমাকে…।
– কি?
– কি?
– আমি তোমাকে কি?
– হ্যা কি?
– আমি ফোন রাখছি।
– ভালবাসি।
– কি? নেটওয়ার্ক সমস্যা করেছে
শুনতে পারি নি।
(এ কেমন শাস্তি)
– ভালবাসি।
– শুনতে পাই নি আরো জোরে কথা
বলুন।
– ঝুমি আমি তোকে ভালবাসি।
– এই আমাকে তুই বললেন
কেন?সুন্দর করে বলুন।
– ঝুমি আমি তোমাকে ভালবাসি।
– কতটুকু?
– সেটা ঠিক জানি না
– মি. পেচা শুনেন আপনি এভাবে আর
আমার দিকে তাকাবেন না।আমাকে
ফলো করবেন না।
– জ্বি আচ্ছা।
– কি জ্বি আচ্চা, তাইলে আমি ফোন
রাখলাম।
– না না না না, আসলে কি বলব আমি
ঠিক বুঝতে পারছি না।
– আপনি এতো বোকা কেন?
– আগেছিলাম না আপনাকে দেখার পর
আমি বোকা হয়ে গেছি।
– তার মানে আমি আপনার অধপতনের
কারন?
– আসলে আমি উলটা বলে ফেলেছি।
সত্যটা হচ্ছে আপনাকে দেখার
পর থেকে আমি অনেক চালাক হয়ে
গেছি।
– হুম সেটা বুঝতেই পাচ্ছি।
– ঝুমি।
– কি?
– আপনি আমাকে ভালবাসেন?
(নিরব ওপাশ)
কি হলো?
– সেটা কি আপনি বুঝেন না?
– নাহ আপনি বলুন!
– জানি না।
– এ কেমন উত্তর? একটা পেচা
আপনার মুখের তিনটে শব্দ
শুনতে চাচ্ছে তাকে আপনি
নিরাশ করছেন কেন?
– এই খবরদার আপনি আমার মারুফ
কে পেচা বলবেন না।
– আপনিই তো একটু আগে পেচা
বললেন।
– ওটা শুধু আমি বলব আর কেউ না।
– এতো ভালবাসা?
– হুম।
– তাহলে বলুন।
– কি?
– তার মানে আপনি চান কাল থেকে
আমি আপনাকে না দেখি, না ফলো
করি।আচ্ছা কাল থেকে আপনার
সামনে আর আসব না। ফোন রাখলাম।
– এই শুনেন শুনেন।
– কি?
– ভালবাসি
– শুনতে পাই নি?
– ভালবাসি
– নেটওয়ার্ক প্রবলেম করছে তো
জোরে কথা বলুন।
– মারুফ love You tooo.
– তাই কতটুকু।
– জানি না।…

Added by

Admin

SHARE

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ADVERTISEMENT